বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এখন লাখো পর্যটকের সমাগম। সমুদ্রের নোনা জলে গা ভিজিয়ে বেশির ভাগ পর্যটক এখন ছুটছেন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দিকে। বঙ্গোপসাগর আর দৃষ্টিনন্দন পাহাড়বেষ্টিত মেরিন ড্রাইভ সড়কের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘প্যারাসেইলিং’। এর মাধ্যমে পাখির মতো আকাশে উড়ে মেরিন ড্রাইভের পশ্চিম পাশের দরিয়ানগর, হিমছড়ি ও প্যাঁচারদ্বীপে প্রতিদিন কয়েক শ পর্যটক বঙ্গোপসাগরে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, সৈকতে মানুষের পদচারণসহ পাশের উঁচু পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করছেন।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সৈকতের দরিয়ানগর পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, এক দল পর্যটক প্যারাসেইলিং করার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ। দরিয়ানগরে প্যারাসেইলিং পরিচালনা করছে ‘ফ্লাই এয়ার সি স্পোর্টস প্যারাসেইলিং’ নামের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। সৈকতে নামার আগে মেরিন ড্রাইভের এক পাশে টিকিট কাউন্টার। টিকিটের মূল্য ২ হাজার ও ২ হাজার ৫০০ টাকা। ২ হাজার টাকার টিকিটে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট আকাশে ওড়া যায়। আর ২ হাজার ৫০০ টাকার টিকিটে আকাশে ওড়ার পাশাপাশি সমুদ্রের লোনাপানিতে দুবার পা ভেজানোর সুযোগ থাকে।
ঢাকার বেইলি রোডের ব্যবসায়ী সোহেল আহমদ প্যারাসেইলিং করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর স্ত্রী কেয়া চৌধুরী। প্যারাসেইলিং প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীরা সোহেলের গায়ে পরিয়ে দিলেন প্যারাসুট আর লাইফজ্যাকেট। আরেক স্বেচ্ছাসেবী সোহেলকে বুঝিয়ে দিলেন আকাশে ওড়ার নিয়মকানুন।
সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না, সেটা পরীক্ষার পর স্বেচ্ছাসেবী হ্যান্ডমাইকে ওড়ার ঘোষণা দেন। এ সময় বালুচরে দাঁড়িয়ে থাকা পর্যটকদেরও সতর্ক করা হয়। মুহূর্তে স্পিডবোটটি লোনাপানিতে ছুটতে শুরু করে। তখন রশির টান পড়ে প্যারাসেইলিংয়ে। ধীরে ধীরে প্যারাসেইলিং আকাশের পানে উড়তে থাকে। তখন বালুচরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করেন। অনেকেই এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করে রাখেন।
প্যারাসেইলিং শেষ করে সোহেল বলেন, ‘ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। ওপরে উড়ার সময় মনে হয়েছিল রশি ছিঁড়ে সমুদ্রে পড়ে যাচ্ছি। নামার সময়ও প্রাণটা হিম হয়ে এসেছিল।’
সিলেটের জিন্দাবাজারের ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম প্যারাসেইলিং করতে এসেছিলেন স্ত্রী ও দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি বলেন, এটা দারুণ ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। পর্যটনের বিকাশে সিলেট, রাজশাহী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্যারাসেইলিং চালুর পরামর্শ দিলেন তিনি।
ফ্লাই এয়ার সি স্পোর্টস প্যারাসেইলিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদ প্রথম আলোকে বলেন, এখনো দেশে প্যারাসেইলিং খুব একটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। এ জন্য জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সবকিছুর দাম বাড়লেও প্যারাসেইলিংয়ের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। বাতাসের ওপর ভিত্তি করে প্যারাসেইলিং করতে হয়। বাতাস থাকলে দিনে সর্বোচ্চ ৩০ জন আকাশে ওড়ার সুযোগ পান। বাতাস বেশি কিংবা কম হলে প্যারাসেইলিং বন্ধ থাকে।
দরিয়ানগরের দক্ষিণে মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি ও প্যাঁচারদ্বীপ সৈকতেও ‘ফানফেস্ট প্যারাসেইলিং’ এবং ‘স্যাটেলাইট ভিশনে প্যারাসেইলিং’ নামে আরও দুটি প্যারাসেইলিং প্রতিষ্ঠান আছে। সেখানেও প্যারাসেইলিংয়ের জন্য সারা দিনই পর্যটকের ভিড় লেগে থাকছে।
বিকেলে প্যাঁচারদ্বীপ সৈকতে গিয়ে দেখা মেলে, পর্যটকেরা প্যারাসেইলিংয়ের পশ্চিমাকাশে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করছেন। কুমিল্লা থেকে বেড়াতে আসা কলেজছাত্রী আসমা আকতার (২০) বলেন, ‘এত দিন সৈকতের বালুচরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখেছি। আজ আকাশে উড়ে সূর্যাস্ত দেখার সৌভাগ্য হলো।’
দরিয়ানগরে প্যারাসেইলিংয়ের পরিচালক আবদুল জলিল ও মো. জমির মালয়েশিয়ার পেনাং সৈকতে ১০-১২ বছর প্যারাসেইলিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেখানে এ কৌশল রপ্ত করেন দুজন।
আবদুল জলিল বলেন, ১২ বছরের নিচে কাউকে প্যারাসেইলিং করতে দেওয়া হয় না। এ ছাড়া ১২০ কেজির বেশি ওজনের মানুষ, দুর্বল চিত্তের মানুষ অথবা হার্টের সমস্যা আছে, এমন লোকজন ছাড়া যেকোনো নারী-পুরুষ নিশ্চিন্তে প্যারাসেইলিং করতে পারেন। তবে যাঁদের উচ্চতায় ভীতি আছে, তাঁদের প্যারাসেইলিং না করাই ভালো। সুত্র; প্রথম আলো
পাঠকের মতামত